ঈদের আগেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হোক

মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যেই মুসলমানদের বৃহত্তম উৎসব ঈদুল ফিতর দোরগোড়ায়। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে কলকারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে অনেক স্থানে ঘটে যায় তুলকালাম কান্ড।

করোনা মহামারির সময়ে পোশাক শ্রমিকরা তাদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে কারখানায় কাজ করে গেছেন। তাই শ্রমিকরা কাজ করে বেতন বা পারিশ্রমিক পাবে না তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। মেনে নেয়া যায় না এসব বিলম্বে বা অনিয়মিতভাবে প্রদানের বিষয়টিও। বছরে দু’বার মাত্র ঈদ আসে। ঈদে শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের অনেক ধরনের আশা-ভরসা থাকে। তাদের এসব চাহিদা মেটাতে প্রাণপণে চেষ্টা করে শ্রমিকরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শতকরা কতজন শ্রমিক পারে তাদের এ চাহিদা মেটাতে। ঈদ আসার বেশ আগে থেকে কলকারখানা, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার বেশিরভাগ শ্রমিকের মধ্যে বিরাজ করে বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে নানা শঙ্কা। ঈদের বাকি আর মাত্র ৫ দিন এখনও বেতন বোনাস পায়নি শ্রমিকরা। এপ্রিল তো দূরের কথা এখনও মার্চের বেতন পাননি অন্তত ৫০০ পোশাক কারখানার শ্রমিক। ফলে ঈদের আগে বেতন ও বোনাস নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অন্যদিকে ৪০-৪৫ ভাগ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বোনাস হয়েছে। আবার অনেকে শুধু বেতন পেয়েছেন। বেতন-বোনাস দিয়েছে এ রকম কারখানার সংখ্যা পাঁচ শতাংশ। শিল্প পুলিশ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রমজানের ঈদে সবার বাড়তি চাহিদা থাকে। সাধারণত সারা বছরের পোশাক ও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এই সময় কেনা হয়। এবার বেতন-বোনাস না পেলে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা দূরে থাক তারা অতি প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা ও বাসা ভাড়াও পরিশোধ করতে পারবেন না। বিষয়টি মালিকদের মাথায় থাকা উচিত।

পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য। কৃষি শ্রমিকের পরই পোশাক শ্রমিকদের অবস্থান। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এই খাত। এই বিপুল মুনাফার জোগান আসে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রম থেকে। এই শ্রমিকদের মধ্যে বিরাট একটা অংশ নারী। এমনিতেই অনেকে বলে থাকেন, নারীদের পারিশ্রমিক পুরুষের পারিশ্রমিকের অর্ধেক। আর নারী শ্রমিকদের মধ্যে কেউ যদি হয় কিশোরী বা শিশু, তাহলে তো আর কথাই নেই। মালিকপক্ষের লোকেরা পারে না তো তাদের দিয়ে বিনা মজুরিতে কাজ করায়। আর এ কারণেই তো অনেক কারখানার অবস্থা ভাল যায় না। কারণ এসবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও নারাজ হন।

শ্রমিকদের যথাসময়ে সব ধরনের দাবি-দাওয়া মেটানো গেলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে। কারণ তখন কাজের স্বাভাবিক পরিবেশও সৃষ্টি হবে। তাছাড়া পবিত্র হাদিসেও বলা আছে, শ্রমিকদের শরীরের ঘাম শুকানোর আগে তাদের পাওনা মিটিয়ে দাও। আমরা যদি এ বিষয়টির ওপরও বেশি জোর দেই তাতে করেও এ সংক্রান্ত কোনো জটিলতাই হয়তো আর দেখা দেবে না। অর্থাৎ এসব ব্যাপারেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা উচিত। কেননা মালিক-শ্রমিকদের সিংহভাগই মুসলমান।

গতবছর সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল। এবছরও কারখানা মালিকরা সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার যদি ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পাওয়ার বিষয়টি শক্তভাবে দেখে তবে এ সংক্রান্ত সমস্যা সহজেই দূর হতে পারে। এজন্য প্রতিটি কারখানায় সরকারের মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো উচিত। যারা সরকারের নির্দেশ পালন না করবে তাদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করা উচিত কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তাহলে এমনিতেই বেতন বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রে কারখানা মালিকরা বেশি সচেতন হবে। আমরা কেউ দেশের বর্তমান দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সামাজিক অসন্তোষ দেখতে চাই না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*