আমি তোমার আম্মুকে বিয়ে করে তোমাকে জন্ম দিয়েছি বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করার জন্য,মাটিতে বসে
খেলা করার জন্য নয়।

—নাজমুদ্দিন আইয়ুবি রাহিমাহুল্লাহ
ছোট্ট সালাউদ্দিন আইয়ুবী বাড়ির সামনে খেলা করছে। সাথে আরও কিছু ছেলে আছে। বাবা নাজমুদ্দিন
আইয়ুব সদ্য জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে এসেছেন। গত একমাস ইমামুদ্দিন জঙ্গি ও তার সুযোগ্য সন্তান
নুরুদ্দীন জঙ্গীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে বেড়িয়েছেন।
সিরিয়া উপকূলে খ্রিস্টানদের উৎপাদ বড্ড বেড়ে গেছে।
তাদের দ্রুত শায়েস্তা করা দরকার।
ক-টা দিনের ছুটি নিয়ে এসেছেন।
আবার ময়দানে ফিরে যাবেন। দূর থেকে দেখলেন –
সালাউদ্দিন থালা-বাসন খেলছে।
ঘোড়া থেকে নামলেন।
ছেলেকে কোলে উঠিয়ে নিলেন।
তিনি ছিলেন দীর্ঘকায় বলিষ্ঠ পুরুষ। ছেলেকে হাত দিয়ে উপরে তুলে ধরে বোললেন।
– আমি তোমার আম্মুকে বিয়ে করে তোমাকে জন্ম দিয়েছি বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করার জন্য।
মাটিতে বসে খেলা করার জন্য নয়।
বাবা এবার ছেলেকে উপর থেকে ছেড়ে দিলেন।
ছেলের মুখে ব্যাথার চাপ পুটে উঠে মিলিয়ে গেল।
– কী ব্যাপার ব্যাথা পাওনি?
– জি, পেয়েছি।
– কাঁদোনি যে?
যে বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করবে,
সামান্য ব্যাথা পেয়ে কন্না করা
তার জন্য শোভা পায় না।
সালাউদ্দিন আইয়ুবী যখন মায়ের গর্ভে। তখন মা স্বপ্নে দেখেছিলেন তার গর্ভে একটা তরবারি রাখা। তিনি বুঝতে পারলেন এটি সাধারণ কোনো স্বপ্ন নয়।সালাউদ্দিন আইয়ুবী সবসময় চিন্তা যুক্ত থাকতেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন, বাইতুল মুকাদ্দাস ক্রুসেডারদের দখলে আমি হাসি কেমন করে?
বায়তুল মুকাদ্দাস তখন খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের দখলে। সেময় বাগদাদ শহরের এক কাঠমিস্ত্রি বসবাস করতেন। এ কাঠমিস্ত্রি মনের ভালোবাসা দিয়ে কারুকার্যমণ্ডিত একটি মিম্বার তৈরি করেন।মিম্বারটি সৌন্দর্যের কথা লোক মুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আর তা দেখতে মানুষ দলে দলে কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে আসতে শুরু করে। অনেকেই মিম্বারটি কিনতে চায়। কিন্তু কাঠমিস্ত্রি তা বিক্রি করতে রাজি হয়নি। তার একই জবাব-‘এ মিম্বার বিক্রির জন্য নয়; বরং এটি বানিয়েছি মসজিদে আল আকসার জন্য‘ কাঠ মিস্ত্রির কথা শুনে সবাই হাসতো। অনেকে তাকে পাগল বলে সম্বোধন করতো। কিন্তু কাঠমিস্ত্রি তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল-অবিচল।
অনেকদিন পর…
একদিন এক ছোট্ট ছেলে তার বাবার হাত ধরে মিম্বারটি দেখতে এসেছিল। কাঠমিস্ত্রির কাছে তার স্বপ্নে কথাও জেনেছিল। সেদিনই ওই ছোট্ট ছেলেটি প্রতিজ্ঞা করেছিল- সে কাঠমিস্ত্রির স্বপ্ন পূরণ করবে। সেই ছেলেটি আর কেউ নন; তিনি হলেন- বীর সেনাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী। আর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের পর সেই মিম্বারটি এ মসজিদে স্থাপন করেছিলেন।
বর্তমান ফিলিস্তিন একজন সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর অপেক্ষায় আছে।
Leave a Reply