কী মধুর আজানের ধ্বনি

মসজিদের মিনার থেকে দৈনিক পাঁচবার সুললিত কণ্ঠে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি। মনোমুগ্ধকর সেই সুরলহরি মানুষকে সুরভিত করে এক নির্মোহ আনন্দে।

আহ্বান করে শাশ্বত সুন্দর, কল্যাণ ও চিরন্তন সফলতার দিকে। এ ডাক ধনী-গরিব, সাদা-কালো, উঁচু-নিচু, কৃষক-শ্রমিক সবাইকে একাকার করে দেয় মাবুদের কুদরতি চরণে।

মুয়াজ্জিনের আজান ধ্বনি এতটাই মধুর, মুসলমানের সঙ্গে সঙ্গে অমুসলিমদের হৃদয়কেও স্পর্শ করে। আজানের মধুর কলতান বারবার শুনতে মন চায়।

প্রতিবারই নতুন ভাব ও আবেগের সৃষ্টি করে। মুসলিম সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আজানের গুরুত্ব ও অবদান অনস্বীকার্য।

আজানের বাংলা অর্থ হলো- ঘোষণা দেওয়া, জানিয়ে দেওয়া, আহ্বান করা বা ডাকা ইত্যাদি। শরিয়ত নির্ধারিত কতকগুলো বাক্যের মাধ্যমে নামাজের জন্য মানুষকে আহ্বান করাকে আজান বলে। আজান ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বা প্রতীক।

প্রিয়নবী (সা.) যখন জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করে মসজিদে নববি নির্মাণের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন, তখন মুসলমানরা জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন। কিন্তু এর জন্য মানুষকে একত্রিত করার মতো কোনো বিশেষ সংকেত বা চিহ্ন ছিল না।

তাই রাসূল (সা.) সাহাবিদের নিয়ে মজলিশে শুরা বা পরামর্শ সভায় বসলেন। এ অধিবেশনে ৪টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়- ১. ঝান্ডা উড়ানো। ২. আগুন লাগানো। ৩. শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া। ৪. ঢোল বাজানো।

কিন্তু প্রস্তাবগুলোর কোনোটিই গৃহীত হয়নি। কেননা কাজকর্মের ব্যস্ততার কারণে অনেকে ঝান্ডা দেখতে পারবে না। দ্বিতীয়টি আগুন প্রজ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত শিঙ্গা ফুঁ দেওয়া খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাজ এবং চতুর্থ প্রস্তাব ঢোল বাজানো হলো ইহুদিদের কাজ।

পরামর্শ সভা সেদিনের জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হলো। ওই রাতেই হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) স্বপ্নে দেখলেন, এক ব্যক্তি শিঙ্গা নিয়ে যাচ্ছে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, শিঙ্গা বিক্রি করবে কিনা। ওই ব্যক্তি প্রশ্ন করল- আপনি শিঙ্গা দিয়ে কী করবেন?

উত্তরে জায়েদ (রা.) বললেন, আমি শিঙ্গা বাজিয়ে মানুষকে নামাজের দিকে আহ্বান করব। সে বলল, এর চেয়ে ভালো জিনিসের কথা বলে দেব কি? এ কথা বলে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদকে আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দিলেন।

পরের দিন স্বপ্নের বিবরণ নবীজি (সা.)-এর সমীপে পেশ করলে তিনি বলেন, নিশ্চয় এটি একটি সত্য স্বপ্ন। অতএব, বেলাল (রা.)কে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দাও।

অতঃপর বেলাল (রা.)-এর কণ্ঠে জোহরের আজান ধ্বনিত হলে হজরত ওমর (রা.) দৌড়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে যিনি সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন তার কসম করে বলছি, তাকে যা দেখানো হয়েছে আমিও অনুরূপ দেখছি। এভাবেই আজানের প্রবর্তন হলো। (আবু দাউদ ৪৯৯)।

ইসলামে আজানের গুরুত্ব অনেক বেশি, এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি প্রদানের অনন্য নিদর্শন। আজান ইসলামি সমাজের বড়ত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশের বিশেষ দিক, হাদিসে পাকে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা ও সম্মানের কথা উল্লেখ রয়েছে।

রাসূল (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরাই হবে মানুষদের মধ্য থেকে সবচেয়ে লম্বা ঘাড়ের অধিকারী, অর্থাৎ অঢেল সওয়াবপ্রাপ্ত হবে। (মুসলিম শরিফ ৮৭৮)। আজানের সুর-ছন্দে প্রাণবন্ত হোক আমাদের জীবন ও সমাজ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*