যে কারণে মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা!

মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব।মানুষ এবং জীন এদু’জাতিকে আল্লাহ তায়ালা বিবেক বুদ্ধি দান করেছেন যা অন্য কোনো প্রাণীকে দান করেননি।দান করেছেন ভালো মন্দ সত্য এবং মিথ্যে দুটোর মাঝে পার্থক্য করার মত অসম্ভব যোগ্যতা।

পৃথিবীতে অসংখ্য অগণিত প্রাণী বিচরণ করছে। তারা কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে সেরা নয়।যেমনটি মানুষকে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে উত্তম আকৃতির কথা কুরআনে এভাবে তুলে ধরলেন যে, আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।(আত ত্বীন – ৪)

তিনি মানুষকে উত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।যা পরিলক্ষিত হয় অন্যান্য প্রাণীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপের ফলে।একটু ভেবে দেখুন আমরা মানুষ কত চমৎকার অবয়ব বিশিষ্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ অবধি কেউ বলতে পারেনি এই অঙ্গটা এদিকে না দিয়ে ওদিকে দেয়ার প্রয়োজন ছিলো! এমন দুটানা প্রশ্ন আমার বোধহয় কারো মনে উদয় হয়নি বরং এমনটি হয়েছে যে, যেই স্রষ্টা এমন সুন্দর করে মানুষের অঙ্গ প্রতঙ্গগুলো স্ব- স্ব স্থানে স্থাপন করেছেন তিনি না জানি কত সুন্দর।

কিন্তু মানুষ এবং জিন ছাড়া বাকী সমুদয় জীবের জন্য ইহ জীবনেই তাদের শুরু এবং শেষ। সে সব জন্তুর প্রয়াণ আছে তবে প্রস্থান নেই।কিন্তু মানুষের প্রয়াণের সাথে সাথেই প্রস্থান ঘটে যায়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি জগতের মধ্যে সেরা সৃষ্টি হিসেবে সর্বোকৃষ্ট মর্যাদায় ভূষিত করেছেন।

যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেন, নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
(বনী-ইসরাঈল – ৭০)

তিনি এই ভূপৃষ্ঠে আমাদেরকে তার অবাধ্যতা করার জন্য প্রেরণ করেননি।বরং প্রেরণ করেছেন তার দাসত্ব বা গোলামী করার জন্য। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমের অনেক জায়গায়তেই তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার আদেশ করেছেন।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। মানুষের সাথে তিনি নম্র ও কোমল আচরণ করতেন আর এটাই ছিলেন তাঁর উত্তম চরিত্রের প্রকাশ । কারণ নম্র আচরণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সুন্নাত। হাদিস শরীফে আছে যে নম্রতা থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। (মেশকাত ৪৩১) আমরা নিরন্তর মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলার চেষ্টা করব।কেননা এটাও একটি সাওয়াবের কাজ।হাদিস শরীফে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যে ব্যক্তি মানুষের ওপর দয়া করে না আল্লাহ তায়ালাও তার ওপর দয়া করে না।(মেশকাত ৪২১)

এসব উত্তম গুণাবলী আমাদের থেকে প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার দিকে। দিন দিন আমাদের মেজাজ নম্রতার স্থলে কড়া মেজাজে পরিবর্তিত হচ্ছে।
অথচ উত্তম গুণাবলীর মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা বিদ্যমান আছে।আর সেই সুন্দর গুণাবলী আমাদের ভেতর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন আদর্শ থেকে আমরা আজ অনেক দূরে সরে যাচ্ছি।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের প্রতি কত নমনীয় ও কোমল ছিলেন।তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে পাওয়া যায়।

আমারা আজ অর্থ সম্পদ এবং বাড়ি গাড়ির ও ইত্যাদি বিষয়ের অহংকার করি অথচ নবী যুগেও অনেক সাহাবীদের অর্থের প্রাচুর্য আমাদের থেকেও কম ছিলো না। তারপরেও তাঁদের আচার ব্যবহার এতটা জগন্য ছিলো না। যেমনটা আমরা আমাদের সমাজে দেখি।

তাঁরা তো ছিলো আমাদের জন্য নমুনা বা মডেল স্বরূপ। যাদের অনুকরণ বা অনুসরণ করলেই মিলে যাবে জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ।যারা আল্লাহ তায়ালার নিকট দু-হাত উত্তলন করলে আল্লাহ তায়ালা তাদের ডাকে আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করতেন।পূরণ করে দিতেন তাঁদের নিত্য নতুন প্রয়োজন। যাদের কথা শুনলে কাফেদের সুঠাম দেহও ভয়ে থরথর করে কেঁপে উঠতো। তবে তাদের ভেতরে কি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ কোনো দিকে কি কম ছিলো? মোটেই কম ছিলো না।

তারা কিন্তু কখনোই দুনিয়াকে এত্ত বেশি অগ্রাধিকার দিতেন না, যেই পরিমাণ আখেরাতকে দিতেন।তবে সেই পরিমাণ দুনিয়ার পাথেয় সংগ্রহ করতেন যতটুকু প্রয়োজন ছিলো।এই ছিলো তাঁদের অবস্থা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাহাবীদের মত আমলী জিন্দেগী নসীব করেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*