অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার হদিস নেই, মামলার সুপারিশ ইভ্যালির বিরুদ্ধে

অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব চিঠি পাঠায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান আজ বুধবার প্রথম আলোকে এ কথা জানান।

দুদক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসে যে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। এসব তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে কোনো আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেলে দুদক যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়। দুদক সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন একটু শিথিল হলে সংস্থাটি তদন্তের কাজ করবে।

এদিকে টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ না করায় ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষা করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়, সে ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মূলত ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণেই কাজ করি। ইভ্যালির ব্যাপারে চিঠি পেয়েছি। প্রতিদিন অভিযোগ আসছে, আমরা নিষ্পত্তিও করছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যগুলোই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে। এতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে চিঠি দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে ইভ্যালি। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ করা ওই কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।

চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে ইভ্যালি। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ করা ওই কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইভ্যালি নিয়ে তদন্ত করছি। এবারের চিঠির বিষয়বস্তুও তদন্তে কাজে লাগবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টাকা পাচার করিনি, আত্মসাৎও করিনি। তবে ব্যবসার উন্নয়ন খাতে অর্থ ব্যয় করেছি। এ ছাড়া ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি করেছি, বেতন-ভাতা নিয়েছি। কেন এইভাবে চিঠি লেখা হলো, বুঝতে পারছি না।’

মোহাম্মদ রাসেল আরও বলেন, ‘কোনো টাকা যে সরাইনি, তা দৃশ্যমান। তবে মূলধন ঘাটতি যে আছে, তা অস্বীকার করছি না। ব্যবসার উন্নয়ন খাতে অর্থ ব্যয়, ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি ইত্যাদি কারণেই এ ঘাটতি হয়েছে। ঘাটতি পূরণে আমরা অংশীদার খুঁজছি।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*