গত কয়েকদিন ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ইস্যুতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবার এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানালেন প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি সোমবার (৯ আগস্ট) গণমাধ্যমে এ আবেদনটি পাঠান।
আবেদনে লন্ডন প্রবাসী প্রবীণ এই সাংবাদিক লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই আবেদন তার একার নয়। দেশে প্রশাসন, একটি বিত্তশালী এবং মিডিয়া গোষ্ঠী মিলে ২৮ বছরের একটি তরুণীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, এটি সে সম্পর্কে সচেতন নাগরিক সমাজের আবেদন।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন, পরীমণিকে গ্রেপ্তারের জন্য দু-চারজন র্যাব কিংবা পুলিশের সদস্য গেলেই হতো।
সেখানে যে যুদ্ধযাত্রা করা হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল কোনো ভয়ংকর ডাকাতকে গ্রেপ্তারের জন্য এই আয়োজন। গ্রেপ্তারের পর থেকেই পরীমণির বিরুদ্ধে একটার পর একটা স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হচ্ছে। এটা বোঝাই যায়, কোনো একটি মহল থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ বিচারের আগেই বিচার। চয়নিকা চৌধুরীর মতো একজন বিখ্যাত নাট্যকারকে অহেতুক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে তার চরিত্রে কালিমালেপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো ক্ষমতার বাড়াবাড়ি। এগুলো চলতে দিলে দেশের নাগরিক স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন, বোট ক্লাবের ঘটনার পরে আসামিরা যে সহজেই জামিন পেল তার রহস্য কী? এই শক্তিশালী মহলটি প্রশাসনের একাংশকে বশ করে যে এই ঘটনাগুলো সাজিয়েছে, তা বুঝতে কি কষ্ট হওয়ার কথা? তারপর মিডিয়া প্রচার। এই প্রচারগুলো যে সত্য নয়, তা সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনের বিবৃতিতেও জানা গেছে। সাড়ে তিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে পরীমণির বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, আরেফিন সাহেবের বিবৃতিতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
পরীমণির ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঘিরে প্রচারণার কথা উল্লেখ করে এই প্রথিতযশা সাংবাদিক লিখেছেন, পরীমণি চলচ্চিত্রের নায়িকা। নানাবিধ পুরুষের সঙ্গেই তার সম্পর্ক থাকতে পারে। সেটা কি অপরাধ? সবিনয় জিজ্ঞাসা, আদালতে বিচার হওয়ার আগে দেশের চলচ্চিত্র জগতের সম্ভাবনাময় তরুণীর জীবন যেভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হলো, তার দায় কে নেবে? আদালতের বিচারে পরীমণি যদি দোষী সাব্যস্ত হয় এবং শাস্তি পায়, তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু একজন তরুণীকে যেভাবে আটক করে হেনস্তা করা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে অপ্রমাণিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা শুধু নারী সমাজের অপমান নয়, মানবতার অপমান। এটা আমাদের নাগরিক স্বাধীনতার ওপর একটি ভয়ংকর থাবা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলেই নারীদের ক্ষমতায়ন শুরু হয়েছে। সে জন্যই তার কাছে সবিনয় আবেদন, পরীমণির ব্যাপারে তিনি হস্তক্ষেপ করুন। তাকে বিচার থেকে রক্ষা করতে বলি না। তাকে হায়েনা গোষ্ঠীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। পরীমণির সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা যে দেশের আরেকজন নাগরিকের ওপর করা হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
তিনি বলেন, দেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী শ্রেণির কাছে আবেদন করি, পরীমণির ওপর এই হেনস্তার প্রতিবাদ করুন। দয়া করে চুপ থাকবেন না। পরীমণির ওপর অত্যাচারের নিন্দা করুন। মিডিয়ার কাছে অনুরোধ, তারা যেন অত্যাচারিতের পক্ষে দাঁড়ান। অত্যাচারী গোষ্ঠীর পক্ষে না যান।
এ সম্পর্কিত সংবাদ-
পরীমনির পৃষ্ঠপোষকদের বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে না কেন পুলিশ: কাজী হায়াৎ
মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। গণমাধ্যমগুলোর বিশেষ একটি অংশ দখল করেছে পরীমনির বিষয়ে নানা সংবাদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ চর্চিত বিষয় এখন পরীমনি। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন এ চিত্রনায়িকা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে এরইমধ্যে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে র্যাবের কাছে।
পরীমনির বিলাসবহুল ও মাদকাসক্ত জীবনের খবরে যখন ডুবে আছে দেশবাসী তখন সনামধন্য চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ প্রশ্ন রেখেছেন, ‘পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার গরিব ঘরের স্মৃতি নামের মেয়েটিকে কারা পরীমনি বানিয়েছে? কারা তাকে মাদকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে? পিরোজপুরের স্মৃতি ওরফে পরীমনি ঢাকায় আসার আগে কখনো কি হুইস্কি, বিয়ার, শিভাস রিগ্যাল, রেড লেবেল, ভদকা—এসবের নাম শুনেছিলেন?’
এক গণমাধ্যমে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আসলে পরীমনির সৌন্দর্যই পরীমনির শত্রু। এ কারণেই বেশির ভাগ মানুষ তার সান্নিধ্যে গেছেন। তারাই তাকে বিপথে ঠেলে দিয়েছেন। তারা তাকে সুন্দর পথের সন্ধান দেননি।’
পরীমনির কোনো অভিভাবক ছিল না জানিয়ে এ নির্মাতা বলেন, ‘পরীমনিকে সুপথে গাইড দেওয়ার কেউ ছিল না। আর এই সুযোগটা অনেকে নিয়েছেন। গেঁয়ো মেয়ে স্মৃতিকে যারা উচ্চাভিলাসী, মাদকাসক্ত পরীমনি বানিয়েছেন তারা আজ কোথায়? তাদের নাম প্রকাশ্যে আনা হোক। তাদের হাত বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে না কেন পুলিশ!’
আমি কোনো দিন পরীমনিকে কাছ থেকে দেখিনি। ইদানীং নানা মাধ্যমে তাঁকে দেখার সুযোগ হচ্ছে। এত সুন্দরী মেয়ে অনেক দিন বাংলা সিনেমায় আসেনি। আসলেই তিনি পরী। সেই সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে যাঁরা তাঁর কাছে ভিড়েছেন, তাঁরাই পরীমনিকে বিপথে নিয়ে গেছেন। তাঁরা পরীমনির সৌন্দর্যকে শিল্পসৃষ্টির কাজে লাগাননি। আজকের এই পরিণতির সেটাই হলো প্রধান কারণ।
Leave a Reply